পলাশবাড়ী প্রজন্ম তরুণ সংঘ - মানবসেবা করাই যে সংগঠনের কাজ
২০২০ সাল ছিল করোনা মহামারীর বছর। করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বে অনেক লোক মারা যান। এই করোনা মহামারীতে কেউ হারিয়েছেন বাবা, কেউ মা এবং কেউ হারিয়েছেন তার অতি আপনজনকে। এই দেখে কলেজছাত্র আল আমিনের মাথায় ভূত চাপে একটি সেবামূলক সংগঠন করার। যে চিন্তা সেই কাজ। আল আমিন তৈরি করেন 'পলাশবাড়ী প্রজন্ম তরুণ সংঘ' নামে একটি সেবামূলক সংগঠন। ওই বছরের ২৩ জুন থেকে শুরু হয় সংগঠনটির যাত্রা। কিন্তু এই সংগঠনের মূলধন পাবে কোথায়? অর্থ সংগ্রহে হাত বাড়িয়ে দেন। বন্ধুবান্ধবসহ অনেকেই। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণির পেশাজীবী মানুষ আজ এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত।
এই সংগঠনটি বর্তমানে একটি জনকল্যাণমূলক সেবা প্রদানকারী সংগঠনে রূপ নিয়েছে। অসহায় মানুষের ভরসার কাণ্ডারি এই ‘পলাশবাড়ী প্রজন্ম তরুণ সংঘ। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা থেকে শুরু করে এতিমখানায় এতিমদের খাদ্য যোগান, দুস্থদের মাঝে নানাভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। যেখানেই অসহায়ত্বের খবর পাচ্ছে সেখানেই পৌঁছে যাচ্ছেন প্রজন্ম তরুণ সংঘের সদস্যরা। খাদ্য সামগ্রী, চিকিৎসা সামগ্রী, শীতবস্ত্র বিতরণ, প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার বিতরণ, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদান, বৃক্ষরোপণ, মসজিদ, মাদ্রাসা উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান । নিজেদের চলার টাকা ও বিত্তবানদের কাছ থেকে পাওয়া সহায়তা সংগঠনের মূল পুঁজি। বর্তমানে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১০০ জন। সংগঠনের উপ-সম্পাদক ফারুক আহমেদ জানান, করোনাকালে সংগঠনের সদস্যরা গরিব অসহায় মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে। অসহায় মানুষদের চিকিৎসা সহায়তাসহ প্রায় ৭ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক বিতরণ করেছে। রমজানে পুরো মাসব্যাপী এতিমখানাসহ বিভিন্ন রাস্তাঘাটে ইফতার সামগ্রী ও সেহরি বিতরণ করা হয়। ঈদে দুস্থদের মাঝে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্য সামগ্রী-পোশাক বিতরণ করা হয়। শীতার্ত মানুষ খুঁজে খুঁজে শীতবস্ত্র উপহার দিয়ে থাকি আমরা।
কন্টেন্ট ক্রেডিট: দৈনিক মানবকন্ঠ - আমাদের ভাষা গণমানুষের
পলাশবাড়ী প্রজন্ম তরুণ সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আল আমিন জানান, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার সময়ে সিলেটে গিয়ে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এছাড়াও ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লার বন্যার্তদের মাঝে আমরা ত্রাণ বিতরণ করেছি। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কাজে সহায়তা করেছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার হৃদয়বান মানুষ। এছাড়াও এই সংগঠনটি একটি ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার করেছে। এতে করে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়বে। বই পড়তে মানুষকে উৎসাহিত করবে। পূর্ব ফরিদপুর গ্রামের মজনু মণ্ডল বলেন, আমাদের এলাকার অসহায় মানুষদের যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকতে দেখছি। জামে মসজিদ এর উন্নয়নকল্পে নগদ অর্থ সহায়তা করেছেন। এতিমখানার শিক্ষক মাহমুদ হাসান বলেন, আমি শুনেছি এই সংগঠনটি আমাদের এতিমখানার বারান্দার কাজের জন্য প্রায় ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের এতিম বাচ্চাদের জন্য সংগঠনটিকে সবসময় কাছে পাই ।
পলাশবাড়ী প্রজন্ম তরুণ সংঘের প্রধান উপদেষ্টা মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ওরা অসহায়দের মধ্যে চিকিৎসা খাদ্য, হুইল চেয়ার বিতরণ, মুমূর্ষু রোগীকে রক্তদানসহ অনেক সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডে সবসময়ই ওদের সাথে থাকার চেষ্টা করি যাতে ওরা উৎসাহ পায়। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সংগঠনটি মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। যেখানেই মানুষের সমস্যার কথা শুনছে সেখানে এই সংগঠনের সদস্যরা সেবাদানের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবীসহ বিত্তমান মানুষরা যদি এই সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে হয়ত পলাশবাড়ী প্রজন্ম তরুণ সংঘ একদিন সারা বাংলাদেশে এক নম্বর সেবামুলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানুষের মনে জায়গা করে নেবে। পরিশেষে পলাশবাড়ীর আপামর জনতা জানিয়েছেন যে, তাদের মানবকল্যাণের কাজগুলো আমাদের মুগ্ধ করেছে। তাদের সংগঠনের সকল সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদসহ সকলের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি।